পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ

আসা একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে অ্যামেনোরিয়া বলা হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, গর্ভধারণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বা জীবনধারার পরিবর্তন।

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ

পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি শরীরের উপর মানসিক ও শারীরিক প্রভাব ফেলে। নিচে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:

১. মাসিক চক্র অনুপস্থিত বা অনিয়মিত হওয়া

  • নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যামেনোরিয়ার মূল লক্ষণ।
  • মাসিক চক্র অনিয়মিত হওয়া বা ৩ মাস বা তার বেশি সময় পিরিয়ড না আসা এই সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।

২. হরমোনজনিত পরিবর্তন

  • শরীরে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হতে পারে।
  • এর ফলে ত্বকে ব্রণ, চুল পড়া, বা শারীরিক শক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

৩. পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি

  • পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় পেটের নিচের অংশে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • এটি জরায়ুর অভ্যন্তরে অতিরিক্ত ময়লা জমার কারণে হতে পারে।

৪. ওজনের পরিবর্তন

  • ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)-এর কারণে ওজন বৃদ্ধি সাধারণ একটি লক্ষণ।

৫. মানসিক পরিবর্তন

  • পিরিয়ড বন্ধ হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।
  • হতাশা, উদ্বেগ, এবং মনোযোগে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

৬. স্তনে ব্যথা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন

  • পিরিয়ড বন্ধ হলে অনেক সময় স্তনে ব্যথা বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
  • হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতার কারণে এটি ঘটে।

৭. গর্ভধারণের লক্ষণ

  • পিরিয়ড বন্ধ হলে এটি গর্ভধারণের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, এবং স্তনে ব্যথা গর্ভধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য লক্ষণ।

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ

১. গর্ভধারণ

গর্ভধারণের কারণে পিরিয়ড স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। যদি আপনি যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকেন এবং পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়, তবে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন।

২. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)

ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি নারীদের মধ্যে পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

৩. অতিরিক্ত মানসিক চাপ

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হরমোনের কার্যক্রম ব্যাহত করে এবং পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে।

৪. খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা

  • অপুষ্টি, খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস পিরিয়ড বন্ধের কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ডায়েট বা ক্ষুধামান্দ্য পিরিয়ডে প্রভাব ফেলে।

৫. থাইরয়েড সমস্যা

থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ সঠিক না হলে পিরিয়ড বন্ধ বা অনিয়মিত হতে পারে।

৬. মেনোপজ

নারীদের জীবনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যা মেনোপজ নামে পরিচিত।

পিরিয়ড বন্ধ হলে করণীয়

১. স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলুন

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

২. ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করুন

  • আদা, দারুচিনি, এবং হলুদ দুধ পিরিয়ড আনার জন্য কার্যকর।
  • তিলের বীজ এবং পেঁপে খাওয়া পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে।

৩. প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান

  • হরমোনের ভারসাম্য নির্ধারণে ব্লাড টেস্ট করুন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড এবং থাইরয়েড পরীক্ষা করান।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

  • তিন মাসের বেশি সময় পিরিয়ড বন্ধ থাকলে অবহেলা না করে গাইনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ বা হরমোন থেরাপি গ্রহণ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *