অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়

জরায়ুতে টিউমার হওয়া একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা অনেক নারী, বিশেষ করে অবিবাহিত নারীদের মধ্যেও দেখা যায়। এই টিউমারগুলোকে সাধারণত ফাইব্রয়েড (Fibroids) বলা হয়, এবং এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলো গুরুতর হতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এই ব্লগপোস্টে, আমরা আলোচনা করব অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়, এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে।

জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড কী?

জরায়ুতে টিউমার, যাকে মেডিক্যাল ভাষায় ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড বলা হয়, একটি সাধারণ অবস্থা যেখানে জরায়ুর মাংসপেশিতে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পায়। এই টিউমারগুলো সাধারণত বেনাইন (ক্ষতিকারক নয়) হয় এবং জরায়ুর ভেতর বা বাইরে গঠন হতে পারে। এগুলো আকারে ছোট থেকে শুরু করে বড় হতে পারে এবং একটি থেকে একাধিক ফাইব্রয়েডও হতে পারে।

ফাইব্রয়েডের ধরন

ফাইব্রয়েডের কয়েকটি ধরন রয়েছে, যেগুলো জরায়ুর বিভিন্ন অংশে বৃদ্ধি পেতে পারে:

  1. ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড: এগুলো জরায়ুর পেশির ভেতর বৃদ্ধি পায়।
  2. সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড: এগুলো জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দার নিচে গঠিত হয়।
  3. সাবসিরোসাল ফাইব্রয়েড: এগুলো জরায়ুর বাইরের দিকে বৃদ্ধি পায়।
  4. পেডানকুলেটেড ফাইব্রয়েড: এই ধরনের ফাইব্রয়েড জরায়ুর বাইরের দিকে একটি পায়ের মতো ডাঁটার সাহায্যে ঝুলে থাকে।

অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার কারণ

জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে, বেশ কিছু কারণ এবং ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা টিউমার বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে:

১. হরমোনজনিত প্রভাব

ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন জরায়ুর মাংসপেশির কোষ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যখন এই হরমোনগুলোর মাত্রা বেশি হয়, তখন জরায়ুর টিস্যুতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে, যা ফাইব্রয়েডের কারণ হতে পারে। হরমোনের এই ভারসাম্যহীনতা মাসিক চক্রের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে, যা অবিবাহিত মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়।

২. জেনেটিক কারণ

পরিবারের কারো যদি জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে, তবে সেই মেয়েরও এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জেনেটিক প্রভাব জরায়ুর টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

৩. মোটাপানা বা ওবেসিটি

মোটাপানা এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে বেশি চর্বি থাকার কারণে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ফাইব্রয়েড তৈরির সম্ভাবনা বাড়ায়।

৪. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা জরায়ুতে টিউমার গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে, যা জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।

৬. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

চর্বিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং ফাইবার কম থাকা খাবার গ্রহণ করার ফলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। এতে জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ে।

ফাইব্রয়েডের লক্ষণ

অনেক সময় জরায়ুতে ফাইব্রয়েড থাকার পরেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • অতিরিক্ত বা দীর্ঘ সময়ের মাসিক রক্তপাত।
  • মাসিকের সময় তীব্র পেট ব্যথা।
  • তলপেটে চাপে অনুভূতি বা ফোলাভাব।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন।
  • যৌন মিলনের সময় ব্যথা।
  • পিঠে ব্যথা বা তলপেটে চাপ অনুভূত হওয়া।
  • গর্ভধারণে সমস্যা।

ফাইব্রয়েডের প্রতিকার এবং চিকিৎসা

ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা নির্ভর করে এর আকার, অবস্থান এবং লক্ষণগুলোর উপর। ছোট ফাইব্রয়েডগুলির ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে বড় বা লক্ষণযুক্ত ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু সাধারণ প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

১. ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা

ফাইব্রয়েডের আকার কমানোর জন্য চিকিৎসক কিছু হরমোনজনিত ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন। ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিকে সীমিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া, ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

২. লাইফস্টাইল পরিবর্তন

স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, প্রচুর ফলমূল এবং সবজি গ্রহণ করা জরায়ুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৩. হরমোন থেরাপি

হরমোন থেরাপি ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসক এ ধরনের থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন।

৪. সার্জারি

যদি ফাইব্রয়েড বড় হয় এবং ওষুধে কাজ না করে, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। মায়োমেকটমি নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাইব্রয়েডগুলো অপসারণ করা হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে হিস্টেরেকটমি করা হতে পারে, যেখানে জরায়ু সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলা হয়।

৫. ইউটেরাইন আয়োম্বোলাইজেশন

এটি একটি অ-সার্জিকাল পদ্ধতি যেখানে জরায়ুর টিউমারকে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করার মাধ্যমে তার আকার কমানো হয়।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

যদি ফাইব্রয়েডের কারণে অত্যাধিক মাসিক রক্তপাত, তীব্র ব্যথা বা গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *