অবিবাহিত মেয়েদের বুকে দুধ আসার কারণ

অবিবাহিত মেয়েদের বুকে দুধ আসা, যাকে মেডিক্যাল ভাষায় গ্যাল্যাক্টোরিয়া বলা হয়, একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা শারীরিক বা হরমোন জনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। যদিও এটি সাধারণত প্রসবের পরে বা গর্ভাবস্থার সময় ঘটে, কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত মেয়েদেরও এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় এই অবস্থা চিন্তার কারণ মনে হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা সম্ভব। আসুন আমরা এই সমস্যার কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
গ্যাল্যাক্টোরিয়ার কারণ
অবিবাহিত মেয়েদের বুকে দুধ আসার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এটি হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হতে পারে, তবে অন্য কিছু স্বাস্থ্যজনিত অবস্থাও এর পেছনে কাজ করতে পারে।
১. প্রোল্যাক্টিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি
প্রোল্যাক্টিন হরমোন স্তনে দুধ উৎপাদনের জন্য দায়ী। সাধারণত গর্ভাবস্থা বা সন্তান জন্মের পর এর মাত্রা বেড়ে যায়। তবে, অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে যেতে পারে। এটি পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে হতে পারে, যেমন প্রোল্যাক্টিনোমা, যা পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার সৃষ্টি করে এবং প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
২. ওষুধের প্রভাব
কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট), হরমোন থেরাপি বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা বাড়াতে পারে। এই কারণে স্তনে দুধ আসা সম্ভব।
৩. থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলে এটি শরীরের অন্যান্য হরমোনে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজম নামক অবস্থা প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে স্তনে দুধ আসার কারণ হতে পারে।
৪. মস্তিষ্কের আঘাত বা সমস্যা
হাইপোথ্যালামাস এবং পিটুইটারি গ্রন্থি, যা মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থিত, শরীরে হরমোনের সঠিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। যদি এই অংশে কোনো আঘাত বা সমস্যা দেখা দেয়, তবে প্রোল্যাক্টিন উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে, যা স্তনে দুধ আসার কারণ হতে পারে।
৫. স্তনে অতিরিক্ত চাপ
যদি কোনো কারণে স্তনে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যেমন বেশি টাইট ব্রা পরা বা স্তন বারবার চাপা দেওয়া হয়, তবে দুধ আসার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যদিও এটি কমন নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।
৬. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ অনেক সময় শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, যার ফলে স্তনে দুধ আসতে পারে। স্ট্রেস মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলে এবং হরমোনের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে।
৭. অন্যান্য শারীরিক সমস্যা
কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন কিডনি রোগ বা লিভারের সমস্যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। এ ধরনের রোগ প্রোল্যাক্টিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে স্তনে দুধ আসার কারণ হতে পারে।
গ্যাল্যাক্টোরিয়ার লক্ষণ
গ্যাল্যাক্টোরিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো স্তন থেকে দুধ বা দুধের মতো সাদা তরল নিঃসরণ। তবে এটি ছাড়াও অন্যান্য কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- স্তনের নিপল থেকে সাদা বা হলুদ রঙের তরল বের হওয়া।
- স্তনে ফুলে যাওয়া বা ব্যথা অনুভব করা।
- মাসিক চক্রে অস্বাভাবিকতা।
- মাথা ব্যথা বা দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া (যদি পিটুইটারি গ্রন্থিতে সমস্যা থাকে)।
- যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া।
প্রতিকার এবং চিকিৎসা
গ্যাল্যাক্টোরিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর মূল কারণের ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যার কারণটি নির্ণয় করা গেলে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। নিচে কিছু সাধারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. চিকিৎসা পরামর্শ
যদি স্তনে দুধ আসার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা মাপা এবং অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যা পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
২. ওষুধের পরিবর্তন
যদি কোনো ওষুধের কারণে প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে চিকিৎসক ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ কমানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
৩. হরমোন থেরাপি
থাইরয়েড বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা থাকলে, হরমোন থেরাপির মাধ্যমে প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. লাইফস্টাইল পরিবর্তন
মানসিক চাপ কমানো, সঠিক ডায়েট মেনে চলা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া স্তনে দুধ আসার সমস্যাকে কমাতে সহায়ক হতে পারে। যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
৫. ব্রা সঠিকভাবে পরা
একটি আরামদায়ক এবং সঠিক মাপের ব্রা পরিধান করা জরুরি, যাতে স্তনে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। খুব টাইট ব্রা পরার কারণে স্তনে চাপ পড়তে পারে, যা দুধ নিঃসরণকে প্রভাবিত করতে পারে।
৬. সার্জারি (গুরুতর ক্ষেত্রে)
যদি পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার (প্রোল্যাক্টিনোমা) থাকে এবং এটি বড় হয় বা ওষুধে কাজ না করে, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই ধরনের ক্ষেত্রে সার্জারি অত্যন্ত কম হয়ে থাকে এবং সাধারণত ওষুধের মাধ্যমেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।