জরায়ু উল্টে যাওয়ার কারণ

জরায়ু নারীর প্রজননতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয়। সাধারণত জরায়ু সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে (অ্যান্টিভার্টেড পজিশন), তবে কিছু নারীর ক্ষেত্রে এটি পেছনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে বা উল্টে যায়, যা “রেট্রোভার্টেড ইউটেরাস” নামে পরিচিত। এটি কোনো গুরুতর সমস্যা না হলেও কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক অসুবিধার কারণ হতে পারে। এই ব্লগে জরায়ু উল্টে যাওয়ার কারণ, এর প্রভাব এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জরায়ু উল্টে যাওয়ার কারণসমূহ
১. জেনেটিক কারণ
অনেক সময় জরায়ুর উল্টে থাকা জেনেটিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে। পরিবারের অন্য নারীদের একই ধরনের অভিজ্ঞতা থাকলে এটি হতে পারে।
২. গর্ভাবস্থার পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার সময় জরায়ুতে যে পরিবর্তন হয়, তার ফলে জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে।
- সন্তান প্রসবের পর জরায়ু নিজের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে না গেলে এটি উল্টে যেতে পারে।
৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দুর্বলতা
পেলভিক অঞ্চলের পেশি এবং লিগামেন্ট দুর্বল হলে জরায়ু নিজের স্থানে সঠিকভাবে অবস্থান করতে ব্যর্থ হতে পারে।
- এটি সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে বা বারবার সন্তান প্রসবের ফলে হতে পারে।
৪. এন্ডোমেট্রিওসিস
এন্ডোমেট্রিওসিস হলে জরায়ুর চারপাশে টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
৫. পেলভিক প্রদাহজনিত রোগ (PID)
জরায়ু এবং এর আশেপাশের টিস্যুতে প্রদাহ বা সংক্রমণ হলে জরায়ুর স্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে।
৬. টিউমার বা সিস্ট
জরায়ু বা এর আশেপাশে টিউমার বা সিস্ট থাকলে এটি জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
৭. বয়সজনিত পরিবর্তন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশি এবং লিগামেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ে, যা জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
জরায়ু উল্টে যাওয়ার লক্ষণসমূহ
১. পেলভিক ব্যথা
জরায়ু উল্টে গেলে পেলভিক অঞ্চলে স্থায়ী বা অনিয়মিত ব্যথা হতে পারে।
২. যৌনমিলনে অস্বস্তি
অনেক নারী যৌনমিলনের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।
৩. মাসিক চক্রের সমস্যা
মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা বা রক্তক্ষরণের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
৪. প্রজনন সমস্যা
জরায়ু উল্টে গেলে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
৫. মলত্যাগ ও প্রস্রাবের সমস্যা
জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তনের কারণে মলত্যাগ বা প্রস্রাবে সমস্যা হতে পারে।
জরায়ু উল্টে যাওয়ার প্রভাব
জরায়ু উল্টে যাওয়া সাধারণত গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি নারীর দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভধারণে বিলম্ব বা জটিলতা।
- দীর্ঘস্থায়ী পেলভিক ব্যথা।
- মানসিক উদ্বেগ এবং অস্বস্তি।
জরায়ু উল্টে গেলে করণীয়
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
জরায়ু উল্টে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- আল্ট্রাসাউন্ড এবং পেলভিক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
২. পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম
- কেগেল ব্যায়াম জরায়ুর চারপাশের পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- এই ব্যায়াম জরায়ুকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
৩. মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহার
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক পেসারি (pessary) নামক একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন, যা জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে।
৪. সার্জারি
যদি অন্যান্য পদ্ধতি কাজ না করে, তবে সার্জারির মাধ্যমে জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে স্থাপন করা যায়।
৫. সঠিক জীবনধারা গ্রহণ
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং শরীরকে ফিট রাখুন।
- অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটি পেলভিক অঞ্চলে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসবের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- পেলভিক অঞ্চলের পেশি শক্তিশালী করতে ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।