বাসর রাতে কি করলে বাচ্চা হয় না

নবদম্পতির জীবনে বাসর রাত একটি বিশেষ মুহূর্ত। অনেকেই এই সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান এবং অনেকে চান সন্তান ধারণের বিষয়টি সময়মতো পরিকল্পিত হোক। তবে সন্তান ধারণ এড়ানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতা। বাসর রাতের মতো বিশেষ মুহূর্তে কীভাবে সন্তান ধারণ এড়ানো যায় তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত থাকেন। এখানে আমরা এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক এবং ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সন্তান ধারণ কীভাবে ঘটে?

সন্তান ধারণ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি ঘটে যখন:

  1. মহিলার ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণুর মিলন ঘটে।
  2. উর্বর সময়ে (fertile window) যৌনমিলন হয়।
  3. ডিম্বাণুর নিষেক (fertilization) এবং পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

সন্তান ধারণ এড়ানোর পদ্ধতি

বাসর রাতে সন্তান ধারণ এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে কিছু কার্যকর এবং সাধারণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. কনডম ব্যবহার

কনডম একটি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য গর্ভনিরোধক পদ্ধতি। এটি ব্যবহার করলে:

  • শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিশতে পারে না।
  • গর্ভধারণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • পাশাপাশি এটি যৌনরোগ প্রতিরোধেও কার্যকর।

২. পিল গ্রহণ

বিয়ের আগে যদি মহিলারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ শুরু করেন, তাহলে এটি গর্ভধারণ রোধে সহায়ক হতে পারে। পিল ডিম্বাণুর মুক্তি বন্ধ করে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায়। তবে, পিল গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৩. উল্টোপথ পদ্ধতি (Withdrawal Method)

এই পদ্ধতিতে পুরুষ যৌনমিলনের সময় নির্দিষ্ট মুহূর্তে বীর্যপাত করেন না বা শরীরের বাইরে করেন। এটি সন্তান ধারণ রোধে সহায়ক হতে পারে, তবে সঠিক সময়জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।

৪. নিরাপদ সময় নির্বাচন

মহিলাদের মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কম থাকে। মাসিক শুরুর পর প্রথম সাত দিন এবং চক্রের শেষ সাত দিন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে, এটি শতভাগ কার্যকর নয়।

৫. ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল

যদি কোনো কারণবশত গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করা না হয়, তবে যৌনমিলনের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ করলে গর্ভধারণ রোধ করা সম্ভব।

বাসর রাতে সন্তান ধারণ এড়ানোর জন্য করণীয়

১. পরিকল্পনা করুন

বাসর রাতে সন্তান ধারণ এড়ানোর জন্য নবদম্পতিকে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। গর্ভনিরোধক পদ্ধতি বেছে নেওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি

যৌন শিক্ষা এবং গর্ভনিরোধক পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভুল ধারণা দূর করে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

৩. চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন

যদি কোনো বিশেষ ধরনের গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আপনার শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণে সহায়ক হবে।

সন্তান ধারণ এড়ানোর উপকারিতা

  1. পরিকল্পিত পরিবার:
    দাম্পত্য জীবনে সন্তান নেওয়ার সঠিক সময় পরিকল্পনা করা গেলে পরিবার সুস্থ ও সুন্দর হয়।
  2. মানসিক স্বস্তি:
    গর্ভধারণ এড়ানোর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে নবদম্পতি মানসিকভাবে স্বস্তি অনুভব করেন।
  3. আর্থিক প্রস্তুতি:
    একটি শিশুর জন্মের আগে আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান ধারণ পরিকল্পিত হলে আর্থিক দায়বদ্ধতা সহজ হয়।

ভুল ধারণা দূর করা জরুরি

অনেকেই মনে করেন, প্রথমবার যৌনমিলনের সময় গর্ভধারণ হয় না। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। উর্বর সময়ে যৌনমিলন হলে যেকোনো সময় গর্ভধারণ সম্ভব। তাই সচেতন থাকা এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *