চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়

মেছতা, বা মেলাজমা, হল ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যেখানে ত্বকের উপর কালো বা বাদামী দাগ দেখা যায়। এটি সাধারণত মুখের ওপর বেশি হয় এবং বিশেষ করে কপাল, গাল, ঠোঁটের উপরে এবং থুতনিতে দেখা যায়। মেছতা মূলত ত্বকের মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
- হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে মহিলাদের গর্ভাবস্থা, মেনোপজ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের সময় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা মেছতা সৃষ্টি করে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি: অতিরিক্ত রোদে থাকা ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা মেছতার প্রধান কারণ।
- জেনেটিক বা বংশগত কারণ: পরিবারের কারও মেছতা থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মেও এটি দেখা দিতে পারে।
- স্কিন কেয়ারের ভুল পদ্ধতি: ভুল প্রসাধনী ব্যবহার কিংবা ত্বকের সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণে মেছতা হতে পারে।
মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মেছতা চিরতরে দূর করার জন্য ঘরোয়া কিছু কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, মেছতা দূর করতে ধৈর্য এবং নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন।
১. লেবুর রস
লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সহায়ক। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- পদ্ধতি: একটি লেবু কেটে এর রস বের করে নিন। এই রস মেছতার উপরে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করুন।
২. আলুর রস
আলুর রস প্রাকৃতিক ত্বক ফর্সা করার উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং মেছতা দূর করতে সহায়ক।
- পদ্ধতি: একটি আলু কেটে তার রস বের করে নিন এবং মেছতার ওপর লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
৩. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- পদ্ধতি: অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে ত্বকের মেছতার ওপর সরাসরি লাগিয়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ কমে আসবে।
৪. মধু এবং দুধের প্যাক
মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সহায়ক।
- পদ্ধতি: এক চা চামচ মধু এবং দুই চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মেছতার ওপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
৫. বেকিং সোডা এবং পানি
বেকিং সোডা প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে সাহায্য করে।
- পদ্ধতি: দুই চা চামচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মেছতার ওপর এই পেস্টটি লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।
মেছতা প্রতিরোধে কিছু টিপস
মেছতা একবার দূর করা গেলেও পুনরায় যাতে না হয়, তার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে:
১. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং প্রতিদিন পুনরায় প্রয়োগ করুন।
২. ত্বক পরিষ্কার রাখুন
মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি। ত্বকে ময়লা জমে গেলে তা মেছতার কারণ হতে পারে। প্রতিদিন মৃদু ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন।
৩. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ
ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং মেছতা দূর করতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন কমলা, লেবু, ব্রকলি, টমেটো ইত্যাদি খাদ্যগ্রহণ করতে হবে।
৪. প্রসাধনীর সঠিক ব্যবহার
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত পণ্য থেকে দূরে থাকুন এবং মেকআপ তুলে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
৫. পানি পান করা
শরীর ও ত্বককে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি ত্বককে সজীব রাখে এবং মেছতা দূর করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসাগত পদ্ধতি
যদি ঘরোয়া উপায়ে মেছতা চিরতরে দূর না হয়, তবে ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে কিছু চিকিৎসাগত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে:
- কেমিক্যাল পিলিং: এটি ত্বকের উপরের স্তরকে তুলে ফেলে, যা নতুন ত্বককে বাইরে আসতে সাহায্য করে।
- মাইক্রোডার্মাব্রেশন: এটি ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- লেজার থেরাপি: ত্বকের গভীর স্তরে কাজ করে মেছতা চিরতরে দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি।