স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

মুখের দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিস (Halitosis) একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা যা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো মুখের ভেতরে জীবাণু, দাঁতের ময়লা, জিহ্বায় জমা ময়লা বা খাদ্যকণা। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধ স্থায়ীভাবে দূর করা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা
মুখের দুর্গন্ধের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া, যা খাদ্যকণা থেকে উৎপন্ন হয়। প্রতিদিন অন্তত দুবার দাঁত ব্রাশ করলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দূর হয়। দাঁতের ফাঁকে বা মাড়ির মধ্যে জমে থাকা খাবারের টুকরোগুলো পরিষ্কার করতে ব্রাশের পাশাপাশি দাঁতের ফ্লসও ব্যবহার করতে হবে। টুথপেস্টের মধ্যে ফ্লোরাইড থাকলে তা আরও ভালো, কারণ এটি দাঁতকে মজবুত করার পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
২. জিহ্বা পরিষ্কার করা
দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার করাও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। জিহ্বার ওপরের দিকে অনেক ব্যাকটেরিয়া জমা হয়, যা মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে। জিহ্বা পরিষ্কার করতে টুথব্রাশ বা জিহ্বা পরিষ্কার করার বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে জিহ্বা পরিষ্কার করা হলে মুখের দুর্গন্ধ কমবে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করা
শরীরের ডিহাইড্রেশন বা পানির অভাব মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখের লালার ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়ক। মুখের শুষ্কতা দূর করতে দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে খাবার পরপরই পানি পান করলে মুখে জমে থাকা খাবারের টুকরোগুলো ধুয়ে যায় এবং মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় না।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
অস্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার বা কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। এ ধরনের খাবার খাওয়ার পর মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। ফল, শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেলে এবং বেশি সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেলে মুখের দুর্গন্ধ কমবে।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা
ধূমপান ও অ্যালকোহল মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম বড় কারণ। ধূমপান দাঁতের ওপর প্লাক তৈরি করে এবং মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে সহায়ক। একইভাবে, অ্যালকোহল মুখের শুষ্কতা বাড়ায়, যা মুখের লালা কমিয়ে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। তাই স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. মুখ ধোয়া এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার
প্রতিদিন মুখ ধোয়া ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সহায়ক। মাউথওয়াশ মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং মুখকে সতেজ রাখে। তবে অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করা ভালো, কারণ অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ মুখকে শুষ্ক করে না। মাউথওয়াশের পরিবর্তে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. চিউইং গাম চিবানো
শুকনো মুখ মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। চিউইং গাম চিবালে মুখে লালার ক্ষরণ বাড়ে, যা মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সহায়ক। তবে চিনিমুক্ত চিউইং গাম চিবানো উচিত, কারণ চিনিযুক্ত গাম মুখের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
৮. ডেন্টিস্টের কাছে নিয়মিত চেকআপ
মুখের দুর্গন্ধ যদি ঘরোয়া প্রতিকার দ্বারা না যায়, তবে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। দাঁতের কোনো সমস্যা বা মুখের ভেতরে কোনো ইনফেকশন থাকলে তা মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। ডেন্টিস্ট নিয়মিত দাঁতের পরিস্কার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন, যা মুখের দুর্গন্ধ স্থায়ীভাবে দূর করতে সহায়ক হবে।
৯. প্রোবায়োটিক গ্রহণ
প্রোবায়োটিক মুখের ভেতরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক, যা মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। দই, কেফির বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে।
১০. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধের কারণে মুখের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়, যা মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। যদি কোনো ওষুধ খাওয়ার পর মুখে দুর্গন্ধ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং বিকল্প ওষুধ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।