বমি বমি ভাব দূর করার উপায়

বমি বমি ভাব, বামির উদ্রেক একটি সাধারণ উপসর্গ যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক জীবনের উপর প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থা, খাদ্য বিষক্রিয়া, পাকস্থলীর সমস্যা, সংক্রমণ, মানসিক চাপ, মোশন সিকনেস ইত্যাদি কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে। যদিও এটি খুবই অস্বস্তিকর, তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দ্বারা এই সমস্যাটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বমি বমি ভাবের কারণসমূহ
১. খাদ্য বিষক্রিয়া
অসাধু খাদ্য গ্রহণের ফলে পেটে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে, যা বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে। বিশেষত বাইরের খাবার বা বাসি খাবার খেলে এই সমস্যা হতে পারে।
২. গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, বিশেষত প্রথম তিন মাসে অনেক মহিলাই বমি বমি ভাবের সম্মুখীন হন। এটি সাধারণত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয় এবং “মর্নিং সিকনেস” নামে পরিচিত।
৩. মোশন সিকনেস
যাত্রা করার সময়, বিশেষত গাড়ি বা নৌকায় যাত্রা করার সময় অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে মোশন সিকনেস বলা হয়, যা ইনার ইয়ারের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়।
৪. হজমের সমস্যা
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (জিআই) সমস্যা যেমন অ্যাসিডিটি, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যার কারণে পাকস্থলীতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে, যার ফলে বমির উদ্রেক হয়।
৫. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
উদ্বেগ বা মানসিক চাপ বমি বমি ভাবের অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়।
বমি বমি ভাব দূর করার উপায়
১. আদা খাওয়া
আদা বমি বমি ভাব দূর করার জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী প্রতিকার। আদায় থাকা জিঞ্জারল উপাদানটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আদা চা তৈরি করে পান করা যেতে পারে, অথবা তাজা আদার টুকরো চুষে খাওয়া যেতে পারে।
২. লেবু ও লেবুর রস
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। আপনি এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়া লেবুর খোসার গন্ধও বমি বমি ভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৩. পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতায় থাকা মেনথল উপাদান পাকস্থলীকে শীতল রাখে এবং বমি বমি ভাব কমায়। পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায় অথবা তাজা পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৪. হালকা খাবার খাওয়া
বমি বমি ভাব হলে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। হালকা খাবার যেমন সেদ্ধ ভাত, স্যুপ, টোস্ট বা ফ্রুট সালাদ খেলে পেটের অস্বস্তি কমবে। মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
৫. পানি ও হাইড্রেশন
বমি বমি ভাব হলে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, তবে অল্প অল্প করে। অতিরিক্ত পানি একবারে পান করলে বমির উদ্রেক হতে পারে। এছাড়া নারকেলের পানি, ডাবের পানি এবং ইলেকট্রোলাইট যুক্ত পানীয় পান করা যেতে পারে।
৬. শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিলে পাকস্থলী এবং ইনার ইয়ার প্রশমিত হয়, যার ফলে বমি বমি ভাব কমে যায়। একটি শান্ত পরিবেশে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করলে এই সমস্যা কমানো সম্ভব।
৭. আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং পাকস্থলীর এসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার পান করা যেতে পারে।
৮. শীতল কমপ্রেস ব্যবহার
পেটে বা মাথায় শীতল কমপ্রেস দিলে বমি বমি ভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি শরীরকে শীতল করে এবং বমি বমি ভাবের অনুভূতিকে কমিয়ে আনে।
৯. আঁকাবাঁকা গন্ধ এড়িয়ে চলা
অনেক সময় তীব্র গন্ধ যেমন পারফিউম, রান্নার গন্ধ বা ধূমপানের গন্ধ বমি বমি ভাব বাড়িয়ে দেয়। তাই এই ধরনের গন্ধ এড়িয়ে চলা উচিত। পরিষ্কার, বায়ুচলাচলযুক্ত একটি স্থানে থাকার চেষ্টা করা উচিত।
১০. মোশন সিকনেস প্রতিরোধ করা
যাত্রার সময় মোশন সিকনেস হলে, যাত্রার আগে অল্প খাবার খাওয়া এবং মাথা নিচু না করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা উচিত। আপনি চাইলে মোশন সিকনেস ব্যান্ড বা বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।