গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে, যা কখনো কখনো সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে জরায়ু ইনফেকশন (Uterine Infection) গর্ভবতী নারীদের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা মা ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জরায়ু ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণ
১. তলপেটে ব্যথা বা চাপ অনুভব
জরায়ুতে সংক্রমণ হলে তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা ধীরে ধীরে তীব্র হতে পারে এবং এটি সাধারণ গর্ভাবস্থার ব্যথার চেয়ে আলাদা।
২. অস্বাভাবিক যোনি স্রাব
সংক্রমণের ফলে যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে। এটি সাধারণত দুর্গন্ধযুক্ত এবং রঙে হলুদ, সবুজ বা বাদামি হতে পারে।
৩. জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগা
জরায়ু ইনফেকশনের একটি গুরুতর লক্ষণ হলো জ্বর। অনেক সময় এই জ্বরের সঙ্গে ঠাণ্ডা লাগা বা শীত অনুভূত হয়।
৪. কোমর ও পিঠে ব্যথা
জরায়ুর সংক্রমণ কোমর বা পিঠের নীচের অংশে ব্যথার কারণ হতে পারে।
৫. প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
ইনফেকশন প্রায়শই মূত্রনালীর ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
৬. দ্রুত হৃদস্পন্দন
গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশন হলে মায়ের হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যেতে পারে। এটি জরায়ুর অবস্থা গুরুতর হলে দেখা দেয়।
৭. গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়ার পরিবর্তন
সংক্রমণের ফলে অনাগত শিশুর নড়াচড়া কমে যেতে পারে। এটি একটি বিপজ্জনক লক্ষণ এবং অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরায়ু ইনফেকশনের সম্ভাব্য কারণ
- যোনি ও জরায়ুর অপরিষ্কারতা।
- অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের সংক্রমণ।
- যৌন সংক্রমণজনিত রোগ (STDs)।
- পূর্বে গর্ভপাত বা অস্ত্রোপচার করা।
- প্রসবের সময় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে।
ঝুঁকি
জরায়ু ইনফেকশন অনাগত শিশুর জন্য গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:
- প্রি-টার্ম লেবার (সময়ের আগে প্রসব)।
- প্লাসেন্টার সংক্রমণ।
- গর্ভস্থ শিশুর কম ওজন।
- মায়ের রক্তে সংক্রমণ (সেপসিস)।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
যোনি ও জরায়ুর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
২. নিয়মিত চেকআপ
গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করানো জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় সংক্রমণ শনাক্ত করা সহজ হয়।
৩. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা
যৌন সংসর্গের সময় সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। সংক্রমণ প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৫. যেকোনো লক্ষণে দ্রুত চিকিৎসা নিন
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
- ডাক্তার ইনফেকশনের ধরন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন।
- গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
- অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর কোনো প্রভাব পড়লে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়।