জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা হয়

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া (Uterine Prolapse) একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নেমে যোনির ভেতরে বা বাইরে চলে আসে। এটি সাধারণত পেশির দুর্বলতা বা পেলভিক অঞ্চলের সহায়ক টিস্যুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঘটে। অনেক নারী, বিশেষ করে গর্ভধারণ বা প্রসবের পর, এই সমস্যার সম্মুখীন হন এবং একটি সাধারণ প্রশ্ন জাগে—“জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা ধারণ করা সম্ভব?”

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়। তাই জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণ, লক্ষণ, এর প্রভাব, এবং এই অবস্থায় গর্ভধারণ সম্ভব কি না, সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণ

১. গর্ভধারণ ও প্রসব:
একাধিকবার গর্ভধারণ বা জটিল প্রসব জরায়ুর পেশি দুর্বল করে দিতে পারে।

২. বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পেশি দুর্বলতা:
মেনোপজের পর শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় পেলভিক অঞ্চলের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. ওজন বহন বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপ:
অনবরত ভারী ওজন বহন বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম পেলভিক পেশির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

৪. কোনো শারীরিক আঘাত:
শারীরিক আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর পেলভিক অঞ্চলের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরায়ু নিচে নেমে যেতে পারে।

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার লক্ষণ

  • যোনিতে ভারী ভাব বা টান অনুভব।
  • তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি।
  • প্রস্রাব বা মলের সময় সমস্যা।
  • যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বা রক্তপাত।
  • যোনির বাইরে মাংসল অংশ দেখা যাওয়া।

জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা হয়?

জরায়ু নিচে নেমে গেলে বাচ্চা হওয়া সম্ভব হলেও কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। জরায়ু প্রল্যাপসের প্রভাব গর্ভধারণের ওপর নির্ভর করে সমস্যার তীব্রতা এবং চিকিৎসার সময়োপযোগীতার ওপর।

১. গর্ভধারণ সম্ভব

  • যদি প্রল্যাপসের মাত্রা হালকা হয়, তবে গর্ভধারণ সম্ভব।
  • তবে জরায়ু সঠিক অবস্থানে না থাকলে গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

২. জটিলতা বৃদ্ধি

জরায়ু প্রল্যাপসের কারণে গর্ভাবস্থায় নিম্নলিখিত জটিলতা দেখা দিতে পারে:

  • প্রি-টার্ম লেবার (সময়ের আগে প্রসব)।
  • গর্ভপাতের ঝুঁকি।
  • প্রসবের সময় সমস্যা।

৩. চিকিৎসা প্রয়োজন

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া অবস্থায় গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসার মাধ্যমে জরায়ুর অবস্থান সঠিক করে নেওয়া গেলে গর্ভধারণ অনেকটাই নিরাপদ হয়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

১. শারীরিক ব্যায়াম (Kegel Exercises):
পেলভিক পেশি মজবুত করতে কেগেল ব্যায়াম কার্যকর। এটি জরায়ুর প্রল্যাপসের সমস্যা হ্রাসে সহায়ক।

২. পেসারি (Pessary):
এটি একটি চিকিৎসা উপকরণ যা যোনির ভেতরে স্থাপন করে জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখে।

৩. হরমোন থেরাপি:
মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের জন্য হরমোন থেরাপি পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।

৪. সার্জারি:
তীব্র প্রল্যাপসের ক্ষেত্রে জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

সতর্কতা ও পরামর্শ

  • গর্ভধারণের আগে বা পরে যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  • পেলভিক অঞ্চলের যত্ন নিতে ভারী ওজন তোলার সময় সতর্ক থাকুন।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন, যাতে পেলভিক পেশি সুস্থ থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *