ডায়াজিপাম বেশি খেলে কি হয়

ডায়াজেপাম একটি শক্তিশালী ওষুধ, যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং উদ্বেগ, অনিদ্রা, বা পেশি সংকোচনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে, এর অতিরিক্ত মাত্রা গ্রহণ (ওভারডোজ) শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডায়াজেপামের ওভারডোজ কখনো প্রাণঘাতীও হতে পারে। এই ব্লগে আমরা ডায়াজেপামের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কী হতে পারে, এর লক্ষণ, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ডায়াজেপামের কাজ ও সীমিত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

ডায়াজেপাম বেনজোডাইআজেপিন শ্রেণির একটি ওষুধ, যা মস্তিষ্কে গামা-অ্যামিনোবিউট্রিক অ্যাসিড (GABA) নামক রাসায়নিকের কার্যকারিতা বাড়ায়। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে এবং শরীরকে আরামদায়ক অবস্থায় নিয়ে যায়।

ডায়াজেপাম ব্যবহারের সঠিক ডোজ:

  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫ থেকে ১০ মি.গ্রা. পরিমাণে গ্রহণ করা হয়।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ডোজ নেওয়া উচিত নয়।

ডায়াজেপাম বেশি খেলে কী হতে পারে?

ডায়াজেপামের অতিরিক্ত ডোজ স্নায়ুতন্ত্রের অতিরিক্ত শিথিলতা ঘটায়, যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপকে ব্যাহত করে। এটি নিচের সমস্যাগুলো সৃষ্টি করতে পারে:

১. স্নায়ুতন্ত্রের চাপ (CNS Depression):

  • ডায়াজেপামের বেশি মাত্রা স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত শান্ত করে দেয়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর হতে শুরু করে।
  • এটি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

২. শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া:

অতিরিক্ত ডোজের ফলে শ্বাসযন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।

৩. বিপজ্জনকভাবে রক্তচাপ কমে যাওয়া:

রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

৪. কথাবার্তা এবং চলাফেরায় অসামঞ্জস্যতা:

ডায়াজেপামের অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগ এবং চলাফেরার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।

৫. অতিরিক্ত ঘুম:

ডায়াজেপাম ওভারডোজে মানুষ ঘুমের মধ্যে চলে যেতে পারে এবং অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ জেগে উঠতে পারে না।

৬. চেতনা হারানো বা কোমা:

ডায়াজেপামের ডোজ খুব বেশি হলে রোগী কোমাতে চলে যেতে পারে, যা জীবনহানির ঝুঁকি সৃষ্টি করে।


লক্ষণ: ডায়াজেপামের অতিরিক্ত ব্যবহার বোঝার উপায়

ডায়াজেপাম বেশি খাওয়ার ফলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে:

  1. শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর বা অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া।
  2. চেতনা হারানো।
  3. দৃষ্টিশক্তি অস্পষ্ট হওয়া।
  4. মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা।
  5. কথা জড়িয়ে আসা।
  6. মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি বা ঘোরের অনুভূতি।
  7. শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।

ঝুঁকি কারা বেশি বহন করে?

১. প্রাপ্তবয়স্করা:

যারা দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াজেপাম ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে এর প্রতি নির্ভরশীলতা গড়ে উঠতে পারে।

২. শিশুরা:

শিশুদের শরীর ডায়াজেপামের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই তাদের জন্য সামান্য অতিরিক্ত ডোজও ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. বয়স্ক ব্যক্তিরা:

বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডায়াজেপামের প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে।

৪. মদ্যপানকারীরা:

ডায়াজেপামের সঙ্গে অ্যালকোহল সেবন করলে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।

ডায়াজেপামের ওভারডোজ হলে করণীয়

১. চিকিৎসা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ:

ডায়াজেপামের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।

২. উপযুক্ত চিকিৎসা:

  • গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজ: পেট পরিষ্কার করে অতিরিক্ত ওষুধ বের করে ফেলা হয়।
  • অ্যান্টিডোট (Flumazenil): ডায়াজেপামের প্রভাব কমাতে ফ্লুমাজেনিল নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
  • লাইফ সাপোর্ট: গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাস বা হৃদযন্ত্র চালু রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ডায়াজেপামের ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা

১. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার নয়:

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ডায়াজেপাম কখনোই ব্যবহার করবেন না।

২. নিয়মিত ডোজ মেনে চলুন:

চিকিৎসক যে পরিমাণ ডোজ নির্ধারণ করেছেন, তা অনুসরণ করুন।

৩. অ্যালকোহল এবং অন্যান্য সিডেটিভ এড়িয়ে চলুন:

ডায়াজেপামের সঙ্গে অ্যালকোহল বা অন্যান্য স্নায়ু শিথিলকারী ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

৪. শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে সতর্কতা:

এই দুই গোষ্ঠীর জন্য ডোজ খুব সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *