মেয়েদের বুকের দুধ কত বছর থাকে

মেয়েদের বুকের দুধ উৎপাদন সাধারণত গর্ভধারণ এবং প্রসবের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি একটি জটিল হরমোন-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া যা শিশু জন্মানোর পর মায়ের দেহে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য ঘটে। তবে, বুকের দুধ কতদিন বা কত বছর থাকে—এটি নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর।

বুকের দুধ কিভাবে তৈরি হয়?

বুকের দুধ মূলত প্রোল্যাকটিন এবং অক্সিটোসিন নামক দুইটি হরমোনের মাধ্যমে তৈরি হয়।

  1. প্রোল্যাকটিন: এই হরমোনটি স্তনের দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে।
  2. অক্সিটোসিন: এটি দুধ নির্গমনের জন্য কাজ করে। শিশু যখন স্তন্যপান করে, তখন এই হরমোন সক্রিয় হয় এবং দুধ প্রবাহিত হয়।

গর্ভাবস্থার সময় থেকেই স্তনের দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সন্তান জন্মের পর স্তন্যপান চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি চালু থাকে।

বুকের দুধ কতদিন থাকে?

১. প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সময়কাল

  • সাধারণত সন্তান প্রসবের পরই মায়ের দেহ দুধ উৎপাদন শুরু করে।
  • স্তন্যপান চলাকালীন সময় দুধ উৎপাদন অব্যাহত থাকে।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ শিশুদের কমপক্ষে ৬ মাস একচেটিয়াভাবে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দেয়। তবে শিশুর প্রথম ২ বছরের মধ্যে স্তন্যপান চালিয়ে যাওয়া উপকারী।

২. স্তন্যপান বন্ধ হলে দুধ উৎপাদন থেমে যায়

  • যদি সন্তান স্তন্যপান বন্ধ করে দেয়, তবে বুকের দুধ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
  • স্তন্যপানের অনুপস্থিতিতে প্রোল্যাকটিনের মাত্রা কমে যায়, যার ফলে দুধ উৎপাদনও বন্ধ হয়।

৩. বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দুধ দীর্ঘ সময় থাকতে পারে

কিছু মায়ের ক্ষেত্রে স্তন্যপান বন্ধ করার পরও স্তনে সামান্য পরিমাণ দুধ কিছু মাস বা বছরের জন্য থাকতে পারে। এটি সাধারণত হরমোনের ভারসাম্যের কারণে ঘটে।

দুধ থাকার সময়কাল কী কী বিষয়ে নির্ভর করে?

১. স্তন্যপানের অভ্যাস

  • শিশু স্তন্যপান যত বেশি করে, তত বেশি দুধ উৎপাদিত হয়।
  • স্তন্যপান বন্ধ করলে বা কমিয়ে দিলে দুধ উৎপাদনও ধীরে ধীরে কমে যায়।

২. হরমোনের ভূমিকা

  • মায়ের শরীরে প্রোল্যাকটিন এবং অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা দুধ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে দুধ শুকিয়ে যেতে বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে।

৩. স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাস

  • মায়ের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মানসিক অবস্থাও বুকের দুধ উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলে।

৪. শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা

  • কিছু শারীরিক সমস্যা বা ওষুধ গ্রহণের ফলে দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • আবার কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার ফলে দুধ উৎপাদন দীর্ঘ সময় ধরে চালু থাকতে পারে।

দুধ দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে করণীয়

কিছু মায়ের স্তনে দুধ দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে, যা তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। এ সময় কী করা উচিত:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
    দুধ উৎপাদন থামানোর জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
  2. স্তনের সঠিক যত্ন নিন:
    দুধ জমে গেলে স্তনে ব্যথা হতে পারে। হালকা ম্যাসাজ বা গরম পানির সেঁক নেওয়া যেতে পারে।
  3. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখুন:
    মানসিক চাপ কমাতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সঠিক খাদ্য এবং ব্যায়াম করুন।

সাধারণ ভুল ধারণা

বুকের দুধ সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে, যেমন:

  • দুধ কেবলমাত্র ৬ মাস থাকে।
  • সন্তান জন্মের অনেক বছর পরেও দুধ থাকা অস্বাভাবিক।
    তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে মায়ের দেহের উপর। হরমোন এবং স্তন্যপানের অভ্যাসের উপর ভিত্তি করেই দুধের উৎপাদন এবং সময়কাল নির্ধারিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *